Thursday, February 27, 2020

পোলাই হইতে হইব: আপনি উপযুক্ত তো পিতা/মাতা হওয়ার!



দেশের অধিকাংশ বাবা-মাই এখনো সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্রে, মাফ করবেন জন্মদান বলবো না, উৎপাদনই বলবো। সন্তান উৎপাদনের ছেলে সন্তান আকাঙ্ক্ষা করে বসে থাকেন। আমি তো এমন বাবাকেও চিনি যিনি ব্যথায় কাতর প্রসূতি স্ত্রীকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার বদলে তিনি বসে গেছেন জায়নামাজে। সেজদায় পড়ে আল্লাহর কাছে কী চাইছেন?
স্ত্রীর সুস্থতার কামনা করছেন না, বরং তিনি কামনা করছেন তার যেন একটা পুত্রসন্তান হয়।

সন্তান্ত জন্মের পর থেকে কৈশোর পেরিয়ে যৌবন পর্যন্ত যে পরিমাণ লবণ ভেঙ্গে একজন মানুষ টিকে থাকে প্রত্যেকটা দেশে, প্রত্যেকটা শহরে ততে করে সন্তান ছেলে হলো নাকি মেয়ে হলো সেই ‘মহান গুরুত্বের দিকটা আমরা যতই না ভেবে থাকতে চাই ততই দেখা যায় এখনো কেউ কেউ ‘পোলাই হইতে হইব বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকছেন।

একজন পিতা অথবা একজন মাতা কেন সন্তান হিসেবে ছেলে চাইবেন, মেয়ে চাইবেন না এটা যেমন একটা আতংকের কথা, তেমনি এটাও বলতে দ্বিধা করব না যে, যদি কোনও দম্পতি কেবলমাত্র ছেলে সন্তান আশা করেই জন্মদান প্রক্রিয়া শুরু করেন, তাহলে তারা পিতা-মাতা হওয়ার যোগ্যই নয়।

আমাদের মত নিম্ন আয়ের দেশে অভিভাবকদের একটা সাধারণ ভুল হচ্ছে যে, সন্তান যদি ছেলে হয় তাহলে সে বড় হয়ে উপার্জন করতে পারবে, যেটা মেয়ে সন্তান পারবে না। জন্মের পর থেকে মেয়ে শিশুটিকে ধরা হয় নাজুক, দুর্বল এবং ঘরোয়া উপকরণ হিসেবে। অথচ আমি দেখেছি, অনেক পরিবারে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের আর্থিক সচ্ছলতা বেশি। এমনকি শুধু তাই না, নিজের বেকার ভাইটির সমস্ত দায়ভার গ্রহণের মত উদার ‘বোনও দেখেছি এই সমজেই।

ছেলে হতেই হবে, এই ধারণা থেকে অনেকেই উঠে এসেছেন। তবুও এই লেখাটা তাদের জন্য যারা এখনো সেজদায় গিয়ে ছেলে সন্তান চেয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। এবং মনে মনে ধরেই নেন যে, কন্যা সন্তানের জন্মই হয় একদিন অন্যের ঘরে চলে যাওয়ার জন্য। কোনও কোনো বাবা মা তো কন্যা সন্তানের প্রাপ্তবয়স্কতা বুদ্ধি, বিবেচনা আর কাজের মধ্য নিয়ে পরিমাপ না করে বরং পরিমাপ করেন ক্যালেন্ডারের পাতা গুণে গুণে।

আমাদের সমাজে একটা মেয়ে একটা ছেলের তুলনায় অনেক বেশি স্ট্রাগল করে বড় হয়। অথচ আমরা দেখতে পাই উলটো, আমরা দেখি মেয়েদের সব স্তরেই বিশেষ সুযোগ সুবিধা! মেয়েদের জন্য ব্যাংকে আলাদা লাইন থাকে, বাসে আলাদা সীট থাকে, মেয়েদের পেছনে ছেলেদের লম্বা লাইন থাকে!
অথচ নানা প্রকার লোকজনের কথার তীর উপেক্ষা করে একটা মেয়ে নিজের পছন্দ মত ‘টপস পর্যন্ত পরতে পারে না!

আমাদের দেশে এবং অন্যান্য দেশেও একটা কৌতুক বেশ প্রচলিত, ‘মেয়েদের বয়স আর ছেলেদের বেতন জিজ্ঞেস করতে নেই
না, কেন! করুন না জিজ্ঞেস মেয়েদের বয়স বলতে আপত্তি কিসের? মেয়ে আইবুড়ো এই ধ্যান ধারণা যেদিন মস্তিষ্ক থেকে না যাবে এই কৌতুক বোধয় ততদিন চলতেই থাকবে। আর ছেলেদের স্যালারী? ওটা তো ছেলেরাই বানিয়েছে যেন, অল্প বেতনের চাকরির কথা সমাজের কাছে লুকাতে পারে!

সত্যি বলতে মেয়েদের বয়স জিজ্ঞেস করতে নেই, কিংবা মেয়েরা তাদের আসল বয়স বলতে চায় না তার কারণ হয়ত এমনটা হবে যে, একটা মেয়ে অন্যের জন্য বাঁচতে বাঁচতে ঠিক কবে থেকে নিজের জন্য একটু বাঁচতে শুরু করে সেটা সে ভুলেই যায়। আর বয়স কাউন্ট তো সেদিন  থেকেই শুরু হবে, যেদিন থেকে কেউ ঠিক নিজের জন্য বাঁচতে শুরু করবে।

পুত্র সন্তান জন্ম না হওয়ার পরে অনেক প্যারেন্ট লজ্জায় বা শরমে আত্মীয়দের কাছে মুখ দেখাতে ভয় পান। ভাবটা এমন যেন, তিনি তো চাল ভাঙা মেশিনে ধান দিয়েছিলেন এখন চাল বের না হয়ে গম কীভাবে হলো!

প্রিয় মা, প্রিয় বাবা--
সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, সন্তান আপনারই তার প্রতি অবহেলা বা অবজ্ঞাভরে তাকাবেন না। আপনার সন্তানকে অবজ্ঞা করা অর্থাৎ নিজেকেই মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন না করা!  

SHARE THIS

0 comments: