Tuesday, March 3, 2020

এবেলঃ গণিতের নোবেল



গণিতের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার -- এবেল পুরস্কার ।  নরওয়ে থেকে দেয়া হয় এই পুরষ্কার ।
যারা জানেন না বা ভুলে গেছেন তাদের জন্য একবার স্মরণ করিয়ে দেই, অন্য অনেক বিষয়ে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হলেও ম্যাথে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয় না ।
ম্যাথের অবদানগুলোকে আসলে কোন না কোন দিক দিয়ে পদার্থে চালিয়ে দেয়া যায় ।
পদার্থবিদেরা তাই বলে থাকেন "ফিজিক্স ইজ দ্যা ফাদার অফ সাইন্স "।
নরওয়ে এর ম্যাথম্যাটিশিয়ান নিলস হেনরিখ এবেল এর নামানুসারে এই পুরষ্কারের নাম দেয়া দেয়া হয় "এবেল প্রাইজ" । 



১৯০২ সালে এবেলের ১০০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই প্রাইজ এর প্রচলন শুরু হয় । ১৯০২ সালে শুরু করা হলেও আবার প্রচলন করা হয় ২০০৩ সালে । এই প্রাইজের মূল্যমান ৬ মিলিয়ন নরোয়েইয়ান মুদ্রা বা ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৭৭৬ মার্কিন ডলার । যেখানে নোবেল প্রাইজের মূল্যমান ৩ লক্ষ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার ।



২০০৩ থেকে এই অব্দি মোট ১৭ জন পেয়েছেন এই সন্মাননা ।  ২০১৬ তে এবেল প্রাইজ পেয়েছেন ব্রিটিশ ম্যাথম্যাটেশিয়ান স্যার  এন্ড্রু জন উইলস । ইনি  রয়েল সোসাইটির গবেষক  এবং  অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক । নাম্বার থিউরি  নিয়ে গবেষণা করেন এবং ফার্মেটস লাস্ট থিউরি প্রমাণ করে এবেল পুরষ্কার পান ।


তাঁর দুইটি স্মরণীয় বাণী: 
১/ সর্বদা সেই সমস্যার সমাধান চেষ্টা করুন যা আপনার কাছে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ । 
২/ শৈশবে আমার যে স্বপ্নগুলো ছিল পরিণত বয়সে এসে আমি তাঁর খুব কম সংখ্যকই খুঁজে পাওয়ার সুযোগ পেয়েছি । 


আপনি হয়ত মনে মনে ড. জন ন্যাশের কথাই ভাবছেন ! ঠিক ধরেছেন ২০১৫ সালে সিজিওফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত এই ম্যাথম্যাটেশিয়ান জন ন্যাশ  পেয়েছেন এবেল প্রাইজ। একই সালে তাঁর  সাথে আরও এবেল প্রাইজ পেয়েছেন লুইস নিরেনবার্গ । এরা দুজনেই মার্কিন গণিতবিদ ।

জন ন্যাশ

জন ন্যাশ এর কথা বলতেই মনে পড়ে গেল A Beautiful MInd মুভিটার কথা । জন ন্যাশের জীবনী নিয়ে করা এই মুভি দেখেন নাই হেন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না । মুভিতে জন ন্যাশের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন গ্ল্যাডিয়েটর খ্যাত Russell Crowe ।



মুভির কথা যখন উঠলই তখন আরেকটা মুভির কথা বলছি,  গণিতের  যুবরাজ শ্রীনিবাস রামানুজন (Srinivasa Ramanujan) , উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত গণিতবিদ । যিনি পাই এর মান নির্ণয়ে অবদান রাখেন । উনি ম্যাথে এতটাই ভাল ছিলেন কিন্তু ইংরেজিতে এতটাই কম পারতেন যে প্রাতিষ্ঠানিক  লেখাপড়ায়  বেশিদূর যেত পারেন নি । শেষকালে তিনি যক্ষ্মায় মারা যান ।
তাঁর জীবনী নিয়ে করা মুভি The Man Who Knew Infinity, চাইলে দেখে নিতে পারেন ।



যাহোক ফিরে আসি [sb]জন ন্যাশের[/sb] কথায়, এই ভদ্রলোক ম্যাথ নিয়ে এতটাই মগ্ন ছিলেন যে দুনিয়াবি সকল কাজ কাম ভুলে যেতেন । একা একা বক বক করতেন । এক পর্যায়ে আক্রান্ত হন সিজিওফ্রেনিয়াতে । ন্যাশ এবেল প্রাইজ পেয়েছেন গেইম থিউরি , ডিফারেন্সিয়াল জ্যামিতি এবং পার্শিয়াল ডিফারেন্সিয়াল ইকুয়েশন উপর অবদানের জন্য ।

যারা গেইম থিউরি কি সেটা নিয়ে চিন্তা করছেন তাদের জন্য নিচের  লিঙ্ক ।

গেম থিউরি- https://en.wikipedia.org/wiki/Game_theory 




লুইস নিরেনবার্গ
লিনিয়ার  এন্ড নন-লিনিয়ার পার্শিয়াল ডিফারেন্সিয়েশন এর গঠন , কাজ এবং জ্যামিতি ও জটিল বিশ্লেষণে তাদের এপ্লিকেশন নিয়ে ফান্ডামেন্টাল কাজ করার জন্য এবেল এওয়ার্ড পান লুইস নিরেনবার্গ । (মানুষ হয় লিনিয়ার ডিফারেন্সিয়েশন না হয় নন-লিনিয়ার ডিফারেন্সিয়েশন তা না হলে পার্শিয়াল ডিফারেন্সিয়েশন নিয়ে কাজ করে  আর উনি মাশাল্লা সব নিয়াই কাজ করছেন! ) 





২০১৪ সালে গণিতের এই সর্বোচ্চ পদক পান রাশিয়ান গণিতবিদ Yakov Sinai (ইয়াকুব সিনাই) । 
ডায়নামিক সিস্টেম নিয়ে গবেষণা করেন এবং সম্ভাব্যতার সূত্রাবলির সিস্টেমের সাথে ডায়নামিক সিস্টেমের সংযোগ ঘটান । তিনি গাণিতিক পদার্থবিদ্যার উপরেও কাজ করেছেন ।






পিয়েরে ডেলিন (Pierre Deligne)  
বেলজিয়ামের গনিতবীদ, জন্ম ৩ অক্টোবর ১৯৪৪ । বর্তমান বয়স ৭৪ বছর । ডক্টরেট করেন আলেকজেন্ডার গ্রোথেনডিয়েক  (Alexander Grot hendieck) এর তত্ত্বাবাধানে এবং তারই সাথে ফ্রান্সের Institute of Advanced Scientific Studies এ কাজ করা শুরু করেন ।




শুরুতে তিনি স্কিম থিউরি নিয়ে কাজ করেন । স্কিম থিউরি এক ধরনের বর্ণালী চাকতি বিশেষ যার মাধ্যমে বিনিময় বীজগিনিত ও জ্যামিতির কিছু কিছু অংশ ব্যাখ্যা করা যেত ।



এটা ছিল একেবারে গণিতের প্রাথমিক শাখাগুলোর একটি । পরে ১৯৬৮ সালে ফ্রান্সের অপর একজন গণিতবিদ জেয়ান পিয়েরে সেরির সাথে মডুলার ফর্ম এবং ফাংশনাল ইকোয়েশন অফ এল-ফাংশন এর উপর গবেষণা করেন । পিয়েরে ডেলিন স্কিম থিউরি ছাড়াও কাজ করেছেন উইল কনজেক্টার্স, রমানুজান-পিটারসন কনজেক্টার্স ও হোজ থিউরির উপরে । মূলত তিনি উইল কনজেক্টার্স প্রমানের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত । ২০১৩ সালে পিয়েরে ডেলিন অর্জন করেন এবেল প্রাইজ । জেয়ান পিয়েরে সেরিও ২০০৩ সালে এবেল পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন।

এছাড়াও তিনি যে যে পুরস্কার পেয়েছেনঃ 
উলফ প্রাইজ ২০০৮
ব্যালজান প্রাইজ ২০০৪
ক্যারাফোর্ড প্রাইজ ১৯৮৮
ফিদেলস মেডেল ১৯৭৮



Endre Szemerédi (আন্দ্রে স্যামারেদি)



১৯৪০ সালের ২১শে আগষ্ট জন্ম এই হাঙ্গেরিয়ান গণিতবিদের । কম্বিনেটরিক্স বা সংযুক্তকারিতা এবং ত্বাত্তিক কম্পিউটার সাইন্স নিয়ে পড়াশুনা ও গবেষণা করেছেন এই গণিতবিদ । ১৯৮১ থে ১৯৮৩ সাল অব্দি পড়াশুনা করেছেন সাউথ ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটিতে ।

গানিতিক গবেষণা, ত্বাত্তিক কম্পিউটার সাইন্স ও বীজগানিতিক সংযুক্তির উপরে প্রকাশ করেছেন ২০০টিরও বেশি নিবন্ধ । তিনি বিষেষভাবে পরিচিত ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত স্যামারেদিস থিউরির জন্য । এই মহান গণিতবিদ এবেল প্রাইজ পেয়েছেন ২০১২ সালে ।

লিখেছেন An Irregular Mind শিরোনামে একটি বই ।


প্রাপ্ত কিছু পুরষ্কার ও সম্মাননাঃ 
এবেল প্রাইজ ২০১২
রোলফ শক প্রাইজ ২০০৮
লেরয় স্টেল প্রাইজ ২০০৮
পোল্যায় প্রাইজ ১৯৭৫
আলফ্রেড র‍্যেনই প্রাইজ ১৯৭৩ 




জন উইলার্ড মিলনার



জন্ম ১৯৩১ সালে নিউ জার্সিতে । মার্কিন এই গনিতিবীদ এক্সোটিক স্পেয়ার বা জটিল বহিঃ গোলক নিয়ে গবেষণা, ফ্যারি-মিলনার থিউরি, মিলনার্স থিউরি, মিলনার-থার্স্টর্ন নিডিং থিউরি ইত্যাদির জন্য পরিচিত ।

বই লিখেছেন বেশ কয়েকটি।  উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বইঃ

ডায়নামিক্যাল সিস্টেম 


মোর্স থিউরি 



সিঙ্গুলার পয়েন্টস অফ কমপ্লেক্স হাইপারসাওফেস



প্রাপ্ত পুরষ্কার ও সম্মাননাঃ 
স্লোয়ান ফেলোশিপ ১৯৫৫
ফিদেলস মেডেল ১৯৬২
ন্যাশনাল মেডেল অফ সাইন্স ১৯৬৭
লে-রয় স্টেলি প্রাইজ ১৯৮২,২০০৪ ও ২০১১
উলফ প্রাইজ ১৯৮৯ 
এবং 
এবেল প্রাইজ ২০১১



জন টরেন্স টেট বা সংক্ষেপে জন টেট 




মার্কিন এই গনিতবিদের জন্ম ১৩ই মার্চ ১৯২৫ সালে মিনিয়াপলিস, মিনেসোটায় ।
মৌলিক বীজগাণিতিক থিউরি, গাণিতিক ও জ্যামিতিক থিউরির উপরে অসংখ্য অবদানের জন্য তিনি সুপরিচিত । তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এর অধ্যাপক ।

গবেষণা করেছেন ফুরিয়ার ট্রান্সফর্ম এর উপরে । যা ইলেকট্রিক সিগন্যালের একটি জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ । এছাড়াও গবেষণা করেছেন নাম্বার ফিল্ড, অটোমর্ফিক ফর্ম ও এল-ফাংশন নিয়ে কাজ করেছেন । সংখ্যাতত্ত্ব নিয়েও কাজ করেছেন এই মার্কিন গণিতবিদ । তিনি ও তাঁর শিক্ষক এমিল আর্টিন একত্রে প্রকাশ করেছেন গ্লোবাল ক্লাস ফিল্ড থিউরি নামের নিবন্ধ ।

এছাড়াও নাম্বার থিউরির উপর তাঁর নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত টেট কনজেক্টার্স ও টেট মডিউল এর জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত ও সমাদৃত ।

প্রাপ্ত পুরষ্কার ও সম্মাননাঃ
উলফ প্রাইজ ১৯৮৯ 
লে-রয় স্টেলি প্রাইজ ১৯৯৫
ফ্রাঙ্ক নেলসন কোল প্রাইজ ১৯৫৬
এবং 
এবেল প্রাইজ ২০১১


এবেল প্রাইজের ওয়েবসাইটঃ   http://www.abelprize.no/

কিপ সলভিং ম্যাথ ।







লেখাঃ জাহিদ অনিক 

কবি ও ব্লগার








SHARE THIS

0 comments: