দিনের তিন বেলার আহারাদি
নিয়ে বলা হয়ে থাকে যে, ‘সকালে খাবে রাজার মতন, দুপুরে খাবে রাজার ছেলের মতন আর রাত্রে
খাবে ভিখেরির মতন!’ এই কথার অর্থ আসলে সকালের নাশতা বা ব্রেকফাস্ট হতে হবে দিনের সবচেয়ে
ভারী ও সুষম খাবার। আর দুপুরের খাবারের মেন্যু অতটা ভারী না হলেও চলবে, তবে খেয়ে নিতে
হবে রুচি অনুযায়ী কিছুটা খাবার দুপুর ১২ টা থেকে ১ টার মধ্যে।
আমরা যারা ঘুম থেকে উঠতে
দেরী করতে ভালোবাসি তারা অনেকেই ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চ এ-দুটোকে একত্রিত করে ‘ব্রাঞ্চ’
একটা অদ্ভুত খাবার খেয়ে থাকি। যেটা করা একদম ঠিক না, কেননা আপনি না হয় সকালে ঘুমিয়ে
থাকেন, আপনার না হয় চেতনা থাকে না কিন্তু আপনার শরীরর এনজাইম তো জেগে গেছে, পাকস্থলীর
সব খাবার সে হজম করে ফেলেছে এখন সে আরও খাদ্য চায় হজম করার জন্য, যদি সেসময় সে কোনও
খাবার না পায় তখন ধীরে ধীরে পাকস্থলীর গাত্র-প্রাচীরের দিকে এগুতে থাকে এবং হাইড্রোক্লোরিক
এসিড আপনার পেটের মধ্যে জ্বালা-পোড়া শুরু করে, তখন আমরা এটাকে বলি গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা
হচ্ছে। আবার যখন আমরা সাথে সাথেই গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট খেয়ে নেই তখন ট্যাবলেট গিয়ে
পাকস্থলীর প্রাচীর জুড়ে একটা আবরণ বা পর্দা লেপটে দেয় যার ফলে ক্ষুধার্ত হাইড্রোক্লোরিক
এসিড প্রাচীর ভেদ করে যেতে পারে না, তাই ব্যথা কমে যায় কিন্তু মনে রাখবেন তখনো কিন্তু
আপনার পেটের মধ্যের এসিড বেশ সক্রিয়, তাকে দমিয়ে রাখতে হলে আপনাকে খেতে হবে। সেজন্যই
বলা হয়ে থাকে যে,
খাবার খাও ফ্যান্টাস্টিক,আর
হবে না গ্যাস্ট্রিক!
এবার আসা যাক সকালের
খাবারের কথায়! কখন খাবো সকালের খাবার আর কী কী খাবো। সকালের নাশতা মূলত সকাল ৮ টা থেকে
সাড়ে ৮ টার মধ্যে করে ফেলা ভালো। তবে ন’টার বেশি একদম নয়। কেউ কেউ খালি পেটে কফি/চা খেয়ে
থাকেন। এটা খারাপ সেটা বলছি না, তবে একেবারে যে ভালো সেটাও বলা যায় না। বেশি পরিমাণ
চা/কফি শরীরে ইউরিক এসিড তৈরি করে যা পরবর্তীতে গাউট রোগের জন্য দায়ী হতে পারে। তাই
সকালে কফি খাবেন, অবশ্যই খাবেন তবে একটা কিছু মুখে দিয়ে, হতে পারে একটা আটার রুটি কিংবা
একটা ফলের স্লাইস!
ডাক্তারদের মতে, সকালে
সবার আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে নেয়া উচিত। এতে করে শরীরের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে আর
কাজেও আসে গতি। আর প্রবাদ বাক্য তো জানাই আছে তাই না, one apple a day keeps the
doctor away। তাই আপেল খাওয়া বেশ যে উপকারী তা আর বলার দরকার নেই। আপেল যে শুধুমাত্র
পাকস্থলী বা পরিপাকের জন্য ভালো সেটাই নয়, আপেল’কে প্রাকৃতিক ব্রাশও বলা হয়। অর্থাৎ আপেলের পটাশিয়াম
ও সোডিয়াম আপনার দাঁত থেকে ময়লা দূর করতে সাহায্য করে।
আর কী কী খাবেন সকালের
খাবারে? যে কোনও ফল ভালো করে ধুয়ে নিতে পারেন। ফ্রুট সালাদ তো থাকতেই পারে। তবে বাজার
থেকে ফল কিনে এনে কমপক্ষে আধা ঘণ্টা কুসুম গরম পানিতে ভিনেগার দিয়ে ভিজিয়ে রাখবেন,
তাহলে ফলের উপরের অংশে লেগে থাকা কার্বাইড ও ফরমালিন চলে যাবে। ফলের মধ্যে আপেলের মধ্যে
আপনার খাদ্য তালিকায় স্থান পেতে পারে কলা! কলাকে বলা হয় দেহের জন্য IPS ! আমাদের ঘরে
বিদ্যুৎ চলে গেলে যেমন IPS থেকে আমরা তাৎক্ষনিক বিদ্যুৎ পেয়ে থাকি, একইভাবে দেহে কোনোভাবে
ক্লান্তি এসে গেলে কলা খেয়ে নিলে দেখবেন চট করে দেহে শক্তি এসে যাবে। তবে খেয়াল রাখতে
হবে কলা যেন একত্রে বেশি খাওয়া না হয়ে যায়, কলাতে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে।
সকালে আরও খেতে পারেন
টক দই, যা হজম ও পুষ্টিকর। এছাড়া সকালের ব্রেকফাস্ট বলতে আমরা যেমনটা বুঝি, পরোটা,
ডিম, নেহারি এসব যে একদম খাওয়া যাবে না তা নয়, তবে দেখে নিতে হবে যেন কোনও কিছুতেই
তেল বেশি না হয়। ইচ্ছে করলেই ডিম পোচ করে নেয়া বিনা তেলে। এবং আটা রুটি অথবা তেলছাড়া
পরোটাও স্বাস্থ্যকর।
আমাদের দেশে কনফ্লেক্স
আর ওটস’মিল অতটা এখনো প্রচলিত নয়, তবে ওটসমিল হতে পারে
দারুণ একটা হেলদি ব্রেকফাস্ট!
এইতো গেল কী কী খাবেন
ব্রেকফাস্টে, এবার দেখা যাক কী কী খাবেন না!
অনেকেই খারাপ অভ্যাস
আছে সকালে খাওয়ার পর পরেই একটা পান মুখে দিয়ে বসেন কিংবা ধরিয়ে ফেলেন সিগারেট। যারা
সিগারেট ছাড়বেন ছাড়বেন করে ভাবছেন কিন্তু পারছেন না, তাদের জন্য একটা মারাত্মক চিন্তার
কথা হচ্ছে এই যে, সিগারেট সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ভরা পেটে। তাই খাওয়ার পরে কিংবা আগে
কখনোই মাদক/সিগারেট/জদ্দাদেয়া পান না।
এছাড়াও কেবলমাত্র একটা
চকোলেট, বাটার কেক কিংবা অল্প খেয়েই দৌড় দেয়া যাবে না। ব্রেকফাস্টে কেবলমাত্র একটা
স্মুদি খাওয়া যাবে না, এতে করে হুট করে বেড়ে যেতে বাড়ে রক্তে সুগারের মাত্রা।
সবচেয়ে বড় কথা, আমরা
ভেতো প্রিয় বাঙ্গালী ভাত খেতেই ভালোবাসি, তবে ব্রেকফাস্টে ভাত একদম নয়। সকাল সকাল ভাত
খেয়ে ফেললে শরীরে আসে এক ধরণের ঝিমঝিমে ভাব ও অলসতা চলে আসে।
তাই ভাত অথবা জাউ-ভাত
সকালে একদম না!
তাই আজ থেকে প্রিয়জন
খেয়েছে কিনা, জিজ্ঞেস না করে জিজ্ঞেস করুণ যে, সে সুষম খাবার খেয়েছে কিনা!
0 comments: